সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সকাল ৪:১০ সময়
এখন থেকে পুলিশে ডোপ টেস্টে ধরা পড়লেই চাকরিচ্যুত ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ডোপ টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের সনাক্ত করে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে পুলিশে যারা মাদকাসক্ত তারা ইতোমধ্যেই সতর্ক হয়ে গেছেন।
তাদের অনেকেই মাদক ছেড়ে সুষ্ঠু জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যারা দীর্ঘদিন মাদক গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন, মাদক ছাড়তে পারছেন না, তারা গোপনে গোপনে চিকিৎসকের কাছে দৌঁড়াচ্ছেন। আসলে তাদের কেউই মাদকাসক্তির কারণে সরকারি চাকরিটা হারাতে চাচ্ছেন না।ডোপ টেস্টের পর যথাযথ ব্যবস্থায় যেতে যেনো প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা হয় এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যসহ অন্যদের মনোবল যেনো না ভাঙে সেই বিষয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বছরের ২৭ জুন দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়িতে ডিএমপির আঞ্চলিক পুলিশ লাইন্সে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট ফোর্সের ব্যারাক উদ্বোধন শেষে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, পুলিশ বাহিনী ড্রাগ নিজে খাবে না।
কাউকে কোনো ধরনের সহযোগিতাও করবে না। পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো অবৈধ অর্থ নেবে না। জিরো করাপশন হবে আমাদের লক্ষ্য। আর ড্রাগ থেকে পয়সা নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
শরীরে ক্যানসার হলে আমরা সে অংশটাকে একেবারে নির্দয়-নিষ্ঠুরভাবে শরীর থেকে অপসারিত করি।
যদি আমাদের কোনো সদস্য ওই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়, তাকে আমরা ক্যানসার মনে করে পুলিশ নামক শরীর থেকে অবশ্যই নিষ্ঠুর ও নির্দয়ভাবে অপসারণ করব।
এরপর গত শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে মিরপুরে ট্রাফিকের ডিসির নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধন শেষে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মাদকের বিষয়ে আমরা সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করিয়েছি।
এর মধ্যে ২৬ জন সদস্যের পজিটিভ পেয়েছি। এই ২৬ জনকে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
পুলিশ সদস্যের শরীরে মাদকের নমুনা সনাক্তের কারণে তাদের চাকরিচ্যুতির ঘোষণা দেওয়ায় নড়েছড়ে বসেছে পুলিশে কর্মরত মাদকাসক্ত সদস্যরা। সরেজমিনে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহে গিয়ে এমনটিই জানা গেছে।
তথ্য মতে, ডোপ টেস্টের কার্যক্রম কেবল ডিএমপিতেই থেমে নেই। এটি সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। উচ্চ পর্যায় থেকে নেওয়া পুলিশের এই কার্যক্রমকে অনেকেই স্বাগত জানাচ্ছেন। তথ্য রয়েছে, কেবল ডিএমপি’র বিভিন্ন ইউনিট ও বিভাগের সন্দেহভাজন ১০০ জনের ডোপ টেস্ট করে ২৬ জন পুলিশ সদস্যের পজিটিভ ফল পাওয়া যায়।
কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার মাদকাসক্ত এসব পুলিশ সদস্যের চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত ধরা পড়া পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে।
বিভাগীয় মামলার মাধ্যমে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে। ডোপ টেস্টে ধরা পড়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বেশিরভাগই থানায় কর্মরত ছিল।তাদের প্রত্যেককেই প্রাথমিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া ২৬ জনের মধ্যে ১ জন ট্রাফিক সার্জেন্ট, ৪ জন এসআই, ৩ জন এএসআই, ১ জন নায়েক এবং ১৭ জন কনস্টেবল। এরমধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ১ জন, পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) ৪ জন, কল্যাণ ও ফোর্সের ৪ জন, ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি জোনের ৭ জন এবং বাকি ১৭ জন পল্লবী, আদাবর, খিলগাঁও, উত্তরখান ও গেন্ডারিয়া থানায় কর্মরত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডোপ টেস্টে যাদের পজিটিভ এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, ট্রাফিক সার্জেন্ট মুনতাসিম, এসআই মো. জাহাঙ্গীর, কনস্টেবল রাসেল, দীন ইসলাম, মো. জুয়েল, আশরাফুল ইসলাম এবং আব্দুল বারী। তারা সবাই ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন।